ডেস্ক রিপোর্ট
গত ০৮ই জুন রাত সাড়ে ৭টার দিকে সাতক্ষীরা সদর
উপজেলার ভোমরা ইউনিয়নের নবাতকাটির নিজ বাড়ির এলাকা থেকে শামিম নামের এক যুবককে আটক করে বিজিবি। পরে তাকে ২৫ বোতল ভারতীয় মাদক উইন কোয়েক্স ও ভারতীয় ৫শ’ রুপি দিয়ে থানা পুলিশে হস্তান্তর করা হয় (সাতক্ষীরা সদর থানার এফআইআর নং-১৬, তারিখ: ০৯-০৬-২০২৫)। তবে বিজিবি সদস্য ইমরান হোসেন সেই সময়ে সাংবাকিদের সাথে জানান ১২৫ বোতল মাদকসহ শামীমকে আটক করা হয়েছে। যার কল রেকর্ডিং সাংবাদিকদের কাছে সংরক্ষণ করা আছে। সে সময়ে এ ঘটনা নিয়ে নানান। তর্ক-বিতর্ক হলেও এ মামলায় জেল থেকে বেরিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন ভুক্তভোগী শামিম হোসেন। এরপর এই ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করে সাংবাদিকরা। তদন্তকালে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শামিম একজন মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী। মাদকের সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। তবে শামিমকে মাদকসহ আটকের ব্যাপারে স্থানীয়রা এবং বিজিবির করা মামলায় উল্লেখিত স্বাক্ষীদের সাথে
কথা বলে জানা গেছে ঘটনার মূল রহস্য। তবে বিষয়টি বিজিবির বিপক্ষে হওয়ায় আর সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। তবে নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানিয়েছেন শামিমের বিরুদ্ধে মাদকের মামলার মূল কারণ কি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মামলার একজন স্বাক্ষী জানিয়েছেন, ‘মূলত বিজিবির ভোমরা ক্যাম্পের সদস্য ইমরান। হোসেনের সাথে স্থানীয় এক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক সম্পর্ক চলে আসছিলো – এ বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে ওই বিজিবি সদস্যের অনৈতিক সম্পর্কের রটনাকারী হিসেবে শামিমকে সন্দেহ করে। সেই ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই শামিমকে আটক করে মাদক দিয়ে চালান করে বিজিবির ইমরান’। তিনি আরো জানান, ‘বিজিবির ইমরান প্রথমে কয়েকজন বিজিবি সদস্যদের সাথে এসে শামিমকে আটক করে লোকজনের থেকে দূরে নিয়ে যায়। পরে বিজিবির একটি গাড়ি আসে। তখন জানতে পারি শামিমের কাছে নাকি মাদক ছিলো। বিজিবি ইমরানের অপরাধ ঢাকতে শামিমের একটি ছেলের জীবন তছনছ করে দিয়েছে বিজিবি সদস্য ইমরান। আমি আদালতে সত্যি স্বাক্ষিটাই দেবো’। মামলার অপর একজন স্বাক্ষী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘তিনি রাত ৯টার দিকে বাড়ি ফিরে শোনেন শামিমকে বিজিবি ধরে নিয়ে গেছে। তারপর রাত ১০টার দিকে বিজিবির ইমরানসহ কয়েকজন বিজিবি সদস্য তার বাড়িতে গিয়ে নাম ও মোবাইল নম্বর লিখে আনে। পরে জানতে পারেন ওই মামলায় তাকে স্বাক্ষী বানানো হয়েছে। অথচ তিনি কিছুই জানেন না। ওই স্বাক্ষীর দাবি বিজিবি সদস্যরা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে শামিমকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়েছে’। জেল ফেরত ভুক্তভোগী শামিমের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ‘শামিম হোসেন ঘোনা এলাকায় ১০ পার্টনারশিপে ২৮ বিঘার একটি মৎস্য ঘেরে পরিচালনা করেন। ৭ই জুন মৎস্য ঘের থেকে ৪ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করে শামিমের পার্টনার মনি। ঘটনার কার দিন ৮ই জুন সন্ধ্যায় মনি শামিমকে নবাতকাটির মোড়ে এসে শামিমকে ২ লাখ টাকা দিয়ে চলে যায়। শামিম সে সময় মাছ বিক্রির দুই লাখ টাকা দিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলে সেই সময় বিজিবি সদস্য ইমরানসহ মোট চারজন বিজিবি সদস্য এসে তাকে পথরোধ করে হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে বেধড়ক মারপিট শুরু করে। পরে শামিমের দেহ তল্লাশি করে শামিমের কাছে থাকা দুই লক্ষ টাকা এবং শামিমের গলায় থাকা দেড় ভরী ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন ও আইফোনসহ দুটি দামি মোবাইলফোন ছিনিয়ে নেয়। তার কিছুক্ষণ পর বিজিবি সদস্য ইমরান কার কাছে যেন ফোন করে। তার কিছুক্ষন পর বিজিবির একটি চার চাকার গাড়ি আসে। সেই গাড়ি থেকে একটিায়ায়। নামিয়ে শামিমের মোটরসাইকেলে ঝুলিয়ে দেয়। দিয়ে আবারো শামিমকে মারপিট শুরু করে বিজিবি’। ভুক্তভোগী শামিম হোসেন আরো যানায় ‘তারা আমার মুখের মধ্যে গামছা ঢুকিয়ে দিয়ে মারপিট করে। এরপর পার্শ্ববর্তী বাড়ির লোকজন আসলে তারা আমাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায় পরে আমার বিরুদ্ধে মাদক ও ভারতীয় টাকার মামলা দেয়’। শামিমের কাছে বিজিবির এমন কর্মকান্ডের কারণ জানতে চাইলে শামিম হোসেন জানান, তাকে আটকের কিছুদিন আগে নবাতকাটি এলাকার একজন মাদক ব্যবসায়ীর মেয়ের সাথে বিজিবি সদস্য ইমরান হোসেনের রঙ্গলীলা দেখে ফেলে শামিম। এ ঘটনা কারো সাথে না বললেও যে কোন ভাবে ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। বিজিবি সদস্য ইমরান হোসেন এবং ওই মাদক ব্যবসায়ীর মেয়ের রঙ্গলীলার ঘটনায় শামিমকে সন্দেহ করে তাকে মাদক মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেন ভুক্তভোগী শামিম হোসেন। ৮ জুন ইমরান হোসেনের কাথোপকথন থেকে জানা যায়, ১২৫ বোতল মাদকসহ শামিমকে আটক করা হয় কিন্তু অপরদিকে মাত্র ২৫ বোতল মাদক ও ভারতীয় ৫০০ রুপি দিয়ে শামিমের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মি বিজিবি সদস্য ইমরান হোসেন জানান, ‘এই ধরনের কোন বক্তব্য দেওয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে কথা বলার রাইট আমাযর নয়, কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কথা বলতে পারে’। তিনি আরো বলেন, ‘এমন হতে পারে যে অন্য কোন রেফারেন্সে কথা হতে পারে বা তাড়াহুড়োর ভিতরে এমনও হতে পারে শুধু ২৫ বলতে গিয়ে ১২৫ বলে ফেলেছি’। নবাতকাটি এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী কবির হোসেনের মেয়ের সাথে সখ্যতার বিষয়টি তিমি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি এবং করেন। এদিকে এই সংবাদের তথ্য সংগ্রহকালে ভোমরার নবাতকাটি চিহ্নিত মাদকব্যবসায়ী কবির হোসেনের স্ত্রী একটি কল রেকডিং সাংবাদিকদের হাতে এসেছে। সেখানে কবিরের স্ত্রী এক সাংবাদিকের সাথে কথপকথোনে জানান ‘শামিমকে আটকের পর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তার মেয়েকে এবং বিজিবি যাওয় সদস্য ইমরান হোসেনকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর বিজিবি ক্যাম্প থেকে তাদেরকে ডেকে একটি ব্যানার দিয়ে সাতক্ষীরায় পাঠানো হয় বিজিবিকে অভিনন্দন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে’। এসব ঘটনা পর্যালোচনার পর সাতক্ষীরা সুশীল সমাজের দাবি নারিঘটিত বিষয়কে ঢাকতেই একটি নিরীহ ছেলেকে মাদক মামলায় ফাসানো হয়েছে। পুলিশ সঠিক সঠিক তদন্ত করলে মূল ঘটনা উদঘাটন হবে।
সূত্র : আমাদের বসুন্ধরা