ঈদ মানেই উৎসব, ঈদ মানেই মাংসের নানা পদ। আর খুলনায় ঈদুল আজহা এলে মাংস রান্নার অপরিহার্য উপকরণ হিসেবে চলে আসে এক নাম— চুইঝাল। একটুখানি চুই মাংসে দিলে তার স্বাদ ও ঘ্রাণ হয়ে ওঠে অনন্য। বিশেষ করে গরু ও খাসির মাংসের স্বাদ বাড়াতে বিশেষ এই মসলার জুড়ি মেলা ভার।
খুলনায় আসন্ন ঈদে বেড়েছে চুইঝালের চাহিদা। সঙ্গে বেড়েছে দামও। চুইঝাল এখন আর শুধু খুলনার ঘরের মসলা নয়, ছড়িয়ে পড়েছে দেশের নানা প্রান্তে।
খুলনা নগরীর বড় বাজারগুলোর একটি গল্লামারী বাজার। সেখানে প্রায় ১৬ বছর ধরে চুইঝাল বিক্রি করছেন মাজাহারুল ইসলাম রানা। ভোরবেলা পসরা নিয়ে বসে যান নিজের ছোট দোকানে। পড়াশোনা ও ব্যবসা একসঙ্গে চালিয়ে গেলেও সম্প্রতি শিক্ষাজীবন শেষ করে পুরোপুরি মন দিয়েছেন চুইঝালের ব্যবসায়।
তিনি বলেন, আগে গড়ে প্রতি কেজি ৮০০ টাকায় যে চুই পাইকারি দরে কেনা হতো, সেটি এখন কিনতে হচ্ছে ১০০০- ১২০০ টাকায়। খাঁটি মূল চুই হলে দাম গিয়ে ঠেকে ১৮০০ টাকায়। ঈদ এলে পাইকারিতে দাম যেমন বাড়ে, তেমন খুচরাতেও একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।
একই বাজারের আরেক বিক্রেতা শুকুর আলী বিশ্বাস প্রায় ৩০ বছর ধরে খুচরা চুইঝাল বিক্রির ব্যবসা করছেন। তার দোকানের সামনে চিকন, মোটা, শিকড় সব ধরনের চুইঝাল রয়েছে।
তিনি বলেন, ঈদে চুইঝালের চাহিদা বহুগুণ বেড়ে যায়। বিশেষ করে কোরবানির ঈদে চাহিদা বাড়ে আরও বেশি। পাইকারি দরে প্রতি মণ চুইঝাল কেনেন ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে। তবে মোটা ও শেড়ক চুইয়ের দাম বেশি বলে জানান তিনি।
খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার মানুষের কাছে চুইঝাল ব্যাপক জনপ্রিয়। দিন দিন এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। শুধু চুইঝালের জনপ্রিয়তার কারণে খুলনা, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অনেক খাবার হোটেল। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাহিদার শীর্ষে রয়েছে খুলনার বিভিন্ন উপজেলায় উৎপাদিত চুইঝাল। এর দামও বেশি।
চুইঝাল মূলত একধরনের মসলাজাতীয় লতানো গাছ। ঝাঁঝালো ও ওষুধি গুণসমৃদ্ধ এই গাছের শিকড়, শাখা-প্রশাখা সবই মসলা হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ছোট ছোট টুকরা করে মসলার মতো রান্নায় ব্যবহার করা হয়। ভোজনরসিকদের কাছে চুইঝালের মাংস এক অনন্য স্বাদের খাবার। শুধু অনলাইনেই চুইঝাল বিক্রির জন্য গড়ে উঠেছে অনেক প্রতিষ্ঠান।
অনলাইনে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ মসলা বিক্রি করেন খুলনার শরিফুল ইসলাম হিরন। অনলাইনে অর্ডার নিয়ে কুরিয়ারের মাধ্যমে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেন তিনি। হিরন বলেন, সারা বছরই চুইঝালের চাহিদা রয়েছে। তবে ঈদের সময় চাহিদা অনেক বাড়ে। বিশেষ করে ঢাকাকেন্দ্রিক ক্রেতা বেশি। ক্রেতারা চান ভালো মানের চুইঝাল। সেটিই তাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করা হয়।
চুইঝাল কী কী উপকার করে তার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। ওই তালিকা অনুযায়ী, চুইঝাল শুধু মাংসের স্বাদই বৃদ্ধি করে না, এটি গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। খাবারের রুচি বাড়াতে ও ক্ষুধামান্দ্য দূর করতেও কার্যকরী। পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহ সারাতে চুইঝাল অনেক উপকারী। স্নায়বিক উত্তেজনা ও মানসিক অস্থিরতা প্রশমন করে, ঘুমের ওষুধ হিসেবে কাজ করে এবং শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে ও শরীরের ব্যথা নিরাময় করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।